সমাজকল্যাণ
এ বিভাগ নারীদের সামাজিক দায়িত্বানুভূতি, স্বাস্থ্য সচেতনতা,সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের সাহায্য-সহযোগিতা ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পরিবেশ আন্দোলনের ক্ষেত্রে তাত্ত্বিকভাবে ও ময়দানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
কার্যক্রম
জেলেপাড়া পরিদর্শন
আমাদের কথিত উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই, শুধু বদলাচ্ছে না মানুষগুলোর জীবন। আমরা জাতি হিসেবে শিক্ষার তথাকথিত শতকরায় পৌঁছে গেছি বহু পূর্বেই, শুধু দৃষ্টিশক্তি দেখছে না আলোর প্রতিচ্ছবি। বিবেকের দরজায় পড়ে গেছে মরিচার প্রলেপ। আমরা স্তরে স্তরে সাজিয়েছি বহুতল ভবন, তবে তাকাইনি হাড্ডিসার, ক্ষুধার্ত অধিকারহারা মানুষদের দিকে। এ যেনো পুঁজিবাদী সভ্যতার এক নির্দয় চিত্র... শিউলিমালা একাডেমি তার যাত্রালগ্ন থেকে সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনে এই বিষয়গুলো জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিউলিমালা সমাজকল্যাণ টিম গিয়েছিলো তুরাগ নদী পার্শ্ববর্তী জেলেপাড়ায়। নাতিদীর্ঘ এই ভূখণ্ডটিতে বাস করছে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার দরিদ্র মানুষ। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়ই এই ধরনের বস্তি এলাকা বিদ্যমান। নানাবিধ সমস্যা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস আর নিত্যনতুন খাদ্য সংকটে জড়িত এই মানুষ গুলোর জীবন প্রতিনিয়তই হয়ে উঠছে দূর্বিষহ। একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলেইম নয়। সুন্দর পরিচ্ছন্ন বাসস্থান, পুষ্টিকর খাদ্য, সুচিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ, সামাজিক নিরাপত্তা আর বিনোদন বেঁচে থাকার জন্য অতীব জরুরী। কিন্তু দুঃখজনক হলো, মনুষ্য সভ্যতার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও মৌলিক এই চাহিদাগুলো থেকে তারা বরাবরই বঞ্চিত। তাদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা উঠে এসেছে শিউলিমালা একাডেমির জরিপে।
পথশিশুদের সাথে আড্ডা
শিউলিমালা একাডেমির সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনে যে সকল কর্মসূচি রয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলো পথশিশু ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে আড্ডা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, সাধ্যানুযায়ী খাবার, প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও শিক্ষা সামগ্রী প্রদান। এ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় প্রতি মাসেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের বস্তি, ফুটপাথে বসবাসকারী সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে ছুটে যায় শিউলিরা।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরীদের সাথে আড্ডা
এই অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবী, পৃথিবীর অপূর্ব রূপ-বৈচিত্র্য আমরা দেখতে পাই আমাদের দু'চোখের মাধ্যমে। এই চোখের মাধ্যমে আমরা মহান রবের সৃষ্টি দেখে বিস্মিত হই, শুকরিয়া আদায় করি। মুগ্ধ হয়ে সাহিত্য রচনা করি। কখনো এই সৌন্দর্যের আকর্ষণে প্রকট ভাবে আকৃষ্ট হয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়ে পড়ি অনেকেই। কিন্তু যাদের এই দৃষ্টিশক্তি নেই, তাদের জীবনটা কেমন? কীভাবে তারা জীবনকে যাপন করে? কীভাবে তারা ভাবে? তাদের অনুভূতি কেমন? সেসব শুনতেই শিউলিমালা একাডেমির সমাজকল্যাণ টিম গিয়েছিলো গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত এবিসি চক্ষু হাসপাতালের অধীনে এবিসি গার্লস শিক্ষালয়ে। যেখানে একদল ব্লাইন্ড বোনদের সাথে শিউলিমালা একাডেমির সমাজকল্যাণ টিম আড্ডা দেয়, কথা বলে, তাদের জীবনের গল্প শোনে। ফিরে আসার সময় সমাজকল্যাণ টিম শিউলিমালা একাডেমির পক্ষ থেকে গিফট প্রদানসহ তাদের কথা, অনুভূতিগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ওয়াদা দিয়ে আসে।
এতিমখানা পরিদর্শন ও এতিম শিশুদের সাথে সময় কাটানো
এতিম! শব্দটা শুনলেই বুকে একটা ধাক্কা লাগে! নির্দ্বিধায় আমরা সবাই স্বীকার করি, এই পৃথিবীতে একজন মানুষের সবচেয়ে আপনজন হলো তার মা-বাবা। সন্তান এবং মা-বাবার মধ্যকার সম্পর্ক ভালো হোক কিংবা খারাপ, দিনশেষে সন্তানের সকল প্রয়োজনে, বিপদ আপদে এই মা-বাবাই এগিয়ে আসেন সবার আগে। যার মা কিংবা বাবা, অথবা মা-বাবা কেউ নেই তার জীবনটা কতটা কষ্টের হয়, তা আমাদের মতো যাদের মা-বাবা আছে তারা কখনোই অনুভব করতে পারবে না। সবকিছু থেকেও এক অসীম শূন্যতা নিয়ে জীবন কাটায় এসব মানুষ। শিউলিমালা একাডেমির সমাজকল্যাণ বিভাগের অন্যতম কার্যক্রম হলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এতিমখানার এতিম শিশুদের সাথে সময় কাটানো, তাদের জীবনের কথাগুলো শোনা, কষ্ট, স্বপ্নগুলো জানা, একসাথে খাওয়াদাওয়া করা। কারণ "আমাদের সভ্যতা মানুষ কেন্দ্রিক। আমরা বেঁচে থাকি মানুষের জন্য, আমরা কাজ করি মানুষের জন্য। এই সৃষ্টিজগৎ, গোটা মানবসভ্যতা আমাদের জন্য আমানত। আমরা বসবাসযোগ্য দুনিয়া গড়ার সংগ্রামে লিপ্ত। মানব সভ্যতার মুক্তির লক্ষ্যে আমরা আবার বসবাসযোগ্য দুনিয়া গড়বোই, ইনশাআল্লাহ। কারণ আমাদের পরিচয় আমরা মুসলিম।" আর মা-বাবাহীন, পরিবার, পরিজন বিহীন এসব শিশুদের সাথে কথা বলতে গিয়ে নতুন করে আমরা আবার অনুভব করা যায়, মানুষই পারে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, অন্যের আনন্দের কারণ হতে।
শীত সামগ্রী বিতরণ
গুটি গুটি পায়ে হিমের কাথা গায়ে জড়িয়ে যখন প্রতি বছর শীতের আগমন ঘটে, তখন একদলকে যেমন দেখা যায় প্রিয় ঋতু শীতকে বরণ করার আনন্দে মেতে উঠতে, একই সাথে চারপাশে পরিলক্ষিত হয় করুণ, জর্জরিত, অসহায়, শীতার্ত একদল মুখচ্ছবি। দ্বিতীয় এই দলের কাছে শীত যেন এক আতংকের নাম! নিত্যদিনের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শীত তাদের জীবনে আরেক কঠিন মাত্রা নিয়ে আবির্ভূত হয়। ছিন্নমূল, অসহায় এসব মানুষের জন্য নিজেদের সামর্থের সর্বোচ্চটা দিয়ে শিউলিমালা একাডেমির সমাজকল্যাণ বিভাগ পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই অসহায় মানুষদের মাঝে শীত উপকরণ সামগ্রী বিতরণ করা হয় প্রতি বছরই। “মানুষ মানুষের জন্য” এই স্লোগানকে বুকে ধারণ করে সমাজকল্যাণ টিম কাজ করে যেতে চায় একটি আদালতপূর্ণ সমাজের বিনির্মাণের লক্ষ্যে।
ঈদ-উল-আযহায় গোশত বিতরণ
দুস্থ-অভাবীদের মাঝে ঈদ-উল-আযহার খুশি ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসে প্রতি বছরই শিউলিমালা একাডেমির পক্ষ থেকে গরু কোরবানী এবং গোশত বিতরণ করা হয়, আলহামদুলিল্লাহ।