শিউলিমালা একাডেমি

সেলিমা সুলতানা বেগম: যুগের খাদিজা


তেজহীন রোদেলা দুপুর। চারপাশে ভাতঘুমের নিরবতা। বাগানের শেষ মাথায় কিছু কোকিল পাখি ক্লান্তিহীন ভাবে ডেকে যাচ্ছে। দখিনা মৃদু হাওয়ায়, জানালার পর্দা খানিকটা সরে গেল। মিষ্টি রোদ এসে পড়লো গুলরুখ বেগমের মুখে। তেজহীন এই রোদ গুলরুখ বেগমের কাছে বড় আরামের। আলতো হাতে পর্দাটা সরিয়ে মুখ বাড়ালেন বাইরে। সময়টা ১৫৩৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী। শীত শেষে বসন্তের ছোঁয়া এখন প্রকৃতির মাঝে স্পষ্ট। রঙ বেরঙের ফুলে ছেয়ে আছে পুরো প্রকৃতি। জীর্ণশীর্ণ পাতাগুলো ঝরে গাছের ডালে উঁকি দিচ্ছে নতুন সবুজ কিশলয়। পুরো প্রকৃতি যেন ঋতুরাজের মর্যাদায় নিজেকে সাজিয়ে হাসছে আপন মহিমায়। প্রকৃতির সাথে হাসছেন গুলরুখ বেগম নিজেও। আনন্দে আজ তার হৃদয় মাতোয়ারা। দীর্ঘ ৯ মাসের সমস্ত কষ্ট যেন নিমিষেই দূর হয়ে গেল এক মানবশিশুর কান্নার আওয়াজে। আজ গুলরুখ বেগমের মাতৃত্বের সাধ পূর্ণ হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন মোঘল হেরেমের সবচেয়ে সুন্দরী এই রাজকন্যা। মেয়ের নাম রাখা হয়েছে সেলিমা বেগম। মা গুলরুখ বেগমের মতোই নজরকাড়া সৌন্দর্য নিয়ে জন্মেছেন সেলিমা। যতবার মেয়ের দিকে তাকাচ্ছেন, আনন্দে মায়ের বুকটা ভরে যাচ্ছে।

কিন্তু গুলরুখ বেগমের এ আনন্দ খুব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র ৪ মাস পরই ইহজগৎ ত্যাগ করেন তিনি। সেলিমা ছিলেন গুলরুখ বেগম এবং কনৌজের ভাইসরয় নুরুদ্দিন মুহাম্মদ মির্জার কন্যা। সম্পর্কে তারা সম্রাট আকবরের ফুফু-ফুফা। সে হিসেবে সেলিমা বেগম বাদশাহ আকবরের ফুফাতো বোন। মাতৃস্নেহ ছাড়াই বেড়ে উঠেন সম্রাট বাবরের এই রূপসী নাতনী। বয়স যখন আঠারো, তখন তার বিয়ে হয় মোঘল সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক বৈরাম খানের সাথে।

সম্রাট বাবর যখন দিল্লীর মসনদ দখল করেন তখন বৈরাম খানের বয়স মাত্র ১৬ বছর। এই বয়সেই তিনি যোগ দেন সম্রাট বাবরের মোঘল সেনাবাহিনীতে। সময়টা ছিল মোঘল সাম্রাজ্যের উত্থানের সময়। অল্প বয়সেই বৈরাম খান তার শৌর্য-বীর্যে মোঘল সেনাবাহিনীতে নিজস্ব এক পরিচয় তৈরি করে নিতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সম্রাট হুমায়ুনের সময়ে তিনি হয়ে উঠেন সম্রাটের সবচেয়ে আস্থাভাজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষুরধার কূটনীতিবিদ। শের শাহ সুরির সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সম্রাট যখন পারস্যে নির্বাসিত ছিলেন, তখন তার একনিষ্ঠ সহচর ছিলেন বৈরাম খান। মোঘল সালতানাত পুনরুদ্ধারের জন্য বৈরাম খান সম্রাটকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করেন। মূলত, বৈরাম খানের কথায় প্রভাবিত হয়েই সম্রাট হুমায়ুন পারস্যের সাহায্য চায়। সম্রাটের নির্দেশে তিনি কান্দাহারও পুনরুদ্ধার করেন। সম্রাট হুমায়ুন তার বিশ্বস্ত বন্ধু বৈরাম খানের প্রতি এতোটাই প্রসন্ন ছিলেন যে তিনি বৈরাম খানকে প্রতিশ্রুতি দেন, ভারত জয়ের সাথে সাথেই তিনি তার ভাগ্নি সালিমা বেগমের সাথে বৈরাম খানের বিয়ে দিয়ে রাজপরিবারের আত্মীয় করে নিবেন (যা আকবরের শাসনামলে সম্পন্ন হয়েছিল)। কিন্তু প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার আগেই সম্রাটের মৃত্যু হয়।

সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন হুমায়ূনের পুত্র আকবর। সে সময় বৈরাম খানকে আকবরের অভিভাবক, প্রধান পরামর্শদাতা, উপদেষ্টা ও শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। সময়টা ছিল মোঘল সাম্রাজ্যের জন্য এক অশনি সংকেত। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল খুবই নাজুক। অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ার দশা। সবদিকে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। নাবালক আকবরের অভিভাবক হিসেবে অন্তবর্তীকালীন শাসকের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন বৈরাম খান। পরোক্ষভাবে ভারতবর্ষের শাসনভারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার ওপর। ধীরে ধীরে বৈরাম খানের দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণ পরামর্শে সম্রাট আকবর মোঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। আকবর বৈরাম খানকে ‘খান বাবা’ বলে ডাকতেন এবং প্রধান সেনাপতি থেকে ওয়াকিল-আল-সালতানা (প্রধানমন্ত্রীর) পদে অভিষিক্ত করেন। মোঘল সাম্রাজ্যের অভিভাবক এবং বিশ্বস্ততার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্রাট আকবর ফুফু গুলরুখ বেগমের মেয়ে সালিমা বেগমের সাথে বৈরাম খানের দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি দিয়ে বাবার ইচ্ছে পূরণ করেন।

বলা হয়ে থাকে, এ বিয়ে নিয়ে মোঘল দরবারের ভেতরে ও বাহিরে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। কারণ এই বিয়ে আলী শুকর বেগের বংশোদ্ভূত দুটি ধারা অর্থাৎ বৈরাম খানের পক্ষ থেকে ব্ল্যাকশীপ তুর্কোমান এবং সেলিমা বেগমের পক্ষ থেকে তৈমুর; ধারাকে একত্রিত করে। সেলিমা বেগম ছিলেন বৈরাম খানের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে বৈরাম খানের এক ছেলে সন্তান হয় যার নাম ছিল আব্দুর রহিম। সৎ ছেলে আব্দুর রহিম এবং স্বামী বৈরাম খানকে নিয়ে সেলিমা বেগমের সংসার প্রথমে বেশ সুন্দর ভাবেই শুরু হয়। কিন্তু এর স্থায়িত্ব বেশি দিন ছিল না। কিছু রাজনৈতিক ভুল এবং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বৈরাম খান আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন। পরপর দুবার খানের বিদ্রোহ সম্রাট আকবর দমন করেন। পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পেরে তিনি সম্রাটের কাছে নতি স্বীকার করে ক্ষমা চান। আকবর তাকে ক্ষমা করে মক্কায়


বিশ্রামে যাওয়ার শর্ত দেন। ১৫৬১ সালের ৩১ জানুয়ারি, পরিবার পরিজন নিয়ে মক্কা যাওয়া পথে গুজরাটের পাটানে আফগানদের একটি দল দ্বারা তিনি আক্রমণের স্বীকার হন। এর নেতৃত্বে ছিলেন মুবারক খান নামে একজন ব্যক্তি। মাচ্চিওয়াড়ার যুদ্ধে বৈরাম খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মুবারকের পিতা নিহত হয়েছিলেন। খানের এই দুর্দিনে সুযোগ বুঝে মোবারক খান পিতৃহত্যার শোধ নিয়ে নেয়। এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে কিছুক্ষণের মাঝেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বৈরাম খান। সদ্য বিধবা সালিমা বেগম, তার সৎ ছেলে আব্দুর রহিমকে (বয়স চার) নিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করে আহমেদাবাদে পৌঁছান। সম্রাট আকবর তার দুঃসময়ের সাথী, প্রিয় অভিভাবক ‘খান বাবা’র মৃত্যুর দুঃখজনক সংবাদ শুনে চরম মর্মাহত হন। তার আদেশ অনুসারে, সেলিমা বেগম এবং আব্দুর রহিমকে অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সাথে মোঘল দরবারে রাজকীয় রক্ষকের অধীনে আনা হয়।

বয়সে প্রায় সাড়ে তিন বছরের বড় বিধবা ফুফাতো বোন সেলিমা বেগমের উচ্চ ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা এবং প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীতে সম্রাট আকবর নিজেই তাকে বিয়ে করে তার সমস্ত দায়িত্ব নিজ কাধে নিয়ে নেন। আর এর মাধ্যমে তিনি মোঘল হেরেমের রাজকন্যা থেকে সুলতানা হয়ে যান। তিনি ছিলেন আকবরের চতুর্থ স্ত্রী। রুকাইয়া সুলতানা বেগমের পর স্ত্রীগণের মধ্যে সেলিমাই ছিলেন দরবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিনি তার স্বামী ও সৎ ছেলে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে মোঘল দরবারে অনেক বড় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এছাড়াও ইতিহাস তাকে স্মরণ করে একজন উচ্চ শিক্ষিত, রুচিসম্পন্ন, অত্যন্ত প্রতিভাবান, বুদ্ধিদীপ্ত, সুদক্ষ, বিদুষী মহিলা হিসেবে। তিনি ছিলেন তার সময়ের একজন প্রতিভাধর লেখক এবং বিখ্যাত কবি। ফারসি ভাষায় তার ছিল অসাধারণ দক্ষতা। তিনি মাখফি (مخفی, “হিডেন ওয়ান”) ছদ্মনামে কবিতা লিখতেন। পরবর্তীতে একই ছদ্মনামে তার প্রপৌত্রী, রাজকুমারী জেব-উন-নিসা কবিতা লিখেছেন। ইতিহাসের পাতায় জেব-উন-নিসা চিত্রায়িত হন সেলিমা সুলতানা বেগমের সমান প্রতিভাবান মোঘল মহিলা হিসেবে।

সেলিমা সুলতানা ছিলেন পড়ুয়া মহিলা। বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অগাধ। সে সময় তার অসাধারণ প্রজ্ঞার জন্য তাকে ‘যুগের খাদিজা’ (খাদিজা-উজ-জামানি) নামে ডাকা হতো। তিনি শুধুমাত্র নিজেই একটি গ্রন্থাগার তৈরি করে তার রক্ষণাবেক্ষণ করেননি, একই সাথে সম্রাট আকবরের গ্রন্থাগারটিও তিনি অবাধে ব্যবহার করেছেন। আকবরের দরবারের একজন ইতিহাসবিদ ছিলেন বাদা’উনি। তিনি তার বই মুনতাখাব উত তাওয়ারিখ-এর এক জায়গায় সেলিমা সুলতানার বইয়ের প্রতি ভালবাসার ওপরে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ”খিরাদ আফজা নামের একটি বই গ্রন্থাগার থেকে হারিয়ে যাওয়ায় সালিমা সুলতানা বেগমের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয় এবং এজন্য সম্রাট আকবর আমার ভাতা বন্ধ করে দেয়। এবং বইটি আমার কাছে থেকে উসুল করার আদেশ জারি করেন।” তার এ বই থেকে জানা যায়, সেলিমা সুলতানা বেগম প্রচুর বই পড়তেন। ‘মোগল যুগে স্ত্রীশিক্ষা’ বইয়ে শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিদুষী সলীমার অধ্যয়ন-স্পৃহা যেমন বলবতী, তাঁহার অধীত পুস্তকের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য তেমনই বিশাল।”

সেলিমা সুলতানা বেগম একই সাথে ছিলেন খুব ধার্মিক। তিনি সম্রাট আকবরের একমাত্র স্ত্রী, যিনি পবিত্র হজ্ব পালন করেন। ১৫৭৬ সালে সেলিমা সুলতানা তার খালা গুলবদন বেগম এবং অন্যান্য আরও অনেক তৈমুর মহিলার সাথে হজ যাত্রা করতে মক্কায় উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তারা আরবে সাড়ে তিন বছর অবস্থান করে চারবার হজ্ব সম্পন্ন করে অবশেষে আগ্রায় ফিরে আসেন।

সেলিমা তার বিবাহিত জীবন জুড়ে নিঃসন্তান ছিলেন। বৈরাম খান এবং সম্রাট আকবর, কারোর ঘরেই তার কোন সন্তান জন্ম নেননি। কোন কোন ইতিহাসবিদ তাকে আকবরের পুত্র সুলতান মুরাদ মির্জার মা বলে থাকেন। তবে, অধিকাংশ ইতিহাসবিদ এ তথ্যকে ভুল বলে শনাক্ত করেন। নিঃসন্তান হলেও সেলিমা বেগম তার মাতৃস্নেহের পুরোটা ঢেলে দিয়েছেন সৎ-পুত্র আব্দুর রহিম (বৈরাম পুত্র) এবং সেলিমের (আকবর পুত্র) উপর। বলা হয়ে থাকে, সেলিমের শিক্ষাদানের পেছনে সেলিমা বেগমেরও বড় একটি প্রভাব রয়েছে। পিতা-পুত্র উভয়ের শাসনামলেই মোঘল দরবারে তিনি প্রবল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। সম্রাট আকবর তার কঠিন মুহুর্তে প্রায়ই সেলিমা বেগমের পরামর্শ নিতেন। নিখুঁত ভাবে পরিস্থিতি যাচাই করে তিনি আকবরকে পরামর্শ দিতেন।

১৬০০ এর দশকের গোড়ার দিকে পিতা আকবর এবং পুত্র সেলিমের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬০১ সালে, সেলিম আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এলাহাবাদকে একটি স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করে এবং তার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় “সেলিম শাহ” রাজকীয় উপাধি গ্রহণ করে। একই সাথে তিনি আকবরের বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবুল ফজলকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন। পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে ওঠে এবং আকবরকে এতটাই ক্রুদ্ধ করে তোলে যে কেউ সেলিমের জন্য আর্জি জানাতে সাহস করেনি। শেষ পর্যন্ত সেলিমা সুলতানা বেগমই আকবরের কাছে উপস্থিত হয়ে


সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে সেলিমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অবশেষে আকবর তার ক্ষমা মঞ্জুর করেন। আবার এই ক্ষমা মঞ্জুরের খবর জানাতে তিনি সেলিমা বেগমকেই পুত্র সেলিমের কাছে এলাহাবাদে পাঠান। সেলিম তাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান এবং তার সাথে আগ্রায় ফিরে যেতে রাজি হন। মূলত সৎ-মা সেলিমা এবং দাদী হামিদা বানু বেগমের প্রচেষ্টায়ই রাজকুমারকে অবশেষে ক্ষমা করা হয়।

পরবর্তীতে সেলিম অর্থাৎ সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলেও সেলিমা সুলতানা বেগমকে দেখা যায় বিচক্ষণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে। খান-ই-আজম মির্জা আজিজ কোকার জন্য সেলিমা বেগম সেবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আজিজ কোকা ছিলেন আকবরের পালক ভাই এবং ফলশ্রুতিতে কয়েক দশক ধরেই হেরেমে তার অবাধ বিচরণ ছিল। তিনি ছিলেন সবার খুব প্রিয় পাত্র। তারই কন্যার সাথে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে খসরু মির্জার বিয়ে হয়। রাজকুমার খসরু যখন তার বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন তার শ্বশুর আজিজ কোকা প্রথম থেকেই এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল বলে প্রমাণিত হয়। শাস্তিস্বরূপ আজিজ কোকার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয় এবং অবশ্যই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে যেত যদি না সেলিমা সুলতানা বেগম পর্দার আড়াল থেকে চিৎকার করে বলতেন:

মহিমান্বিত সম্রাট, হেরেমের সমস্ত মহিলাগণ মির্জা আজিজ কোকার পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এখানে জড়ো হয়েছে। ভালো হয়, আপনি ভেতরে আসুন। আর আপনি ভেতরে না আসলে সমস্ত মহিলা এখানে চলে আসবে।

সম্রাট জাহাঙ্গীর এভাবে হেরেমের ভেতরে যেতে বাধ্য হন এবং তার সৎ মায়েদের চাপের কারণে অবশেষে তিনি আজিজ কোকোকে ক্ষমা করে দেন।

১৬১৩ সালে আগ্রায় অসুস্থ হয়ে সেলিমা সুলতানা বেগম ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ষাট বছর। তার আদেশে, তার দেহ আগ্রার মান্দারকার বাগানে দাফন করা হয়।

সম্রাট জাহাঙ্গীর তার সৎ মা সেলিমা সুলতানা বেগমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ❝তিনি (সেলিমা সুলতানা বেগম) সমস্ত ভালো গুণাবলীতে সুশোভিত ছিলেন। তাঁর মতো এমন প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দক্ষতা খুব কম মহিলার মধ্যেই দেখতে পেয়েছি। তিনি ছিলেন আপন ব্যক্তিত্বে মহিমান্বিত। তিনি তার কাজ ও আচরণের মধ্য দিয়ে নিজেকে একজন উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, বুদ্ধিদীপ্ত নারী হিসেবে উপস্থাপন করে গিয়েছেন।❞

সংকলক: নাফিসা নাজমী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *