শিউলিমালা একাডেমি

“তোমাকেই বলছি, হে আমার কুদস”

তোমার ক্লান্ত চোখ আমায় ঘুমোতে দেয় না,
তোমার বিষণ্ণ রোদমাখা মিনারগুলো ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তোলে নিউরনে, সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণকারী বর্ণমালা।
পরিযায়ী কবুতরেরা যখন ফিরে যায় তোমার প্রাঙ্গণ থেকে, আর এক মুঠো শান্তির জন্য হাহাকার করে উঠে তোমার পথ-প্রান্তর,
আমি আধ-ঘুম ভেঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠি, “ইন্তিফাদা!”

হে কুদস! আমার শহর!
রৌদ্রছায়ার মরুদ্যানের নগরী!
শত রাসূলের পদধূলি জড়ানো পথের ঘুমহীন প্রহরী!
হে আমার প্রিয়! জলপাই বাগানের পবিত্র ভূমি!

আমি ঠিকই জেগে উঠছি অর্পিত শপথের ঝংকারে, বিজয়ের গোলা-বারুদ পোষা তৃষিত হৃদয়ে।
কথা দিলাম, আগামীকাল তোমার স্মৃতিগন্ধে ভরপুর প্রাচীণ দেয়াল থেকে রক্ত মুছে এঁকে দেবো কবিতার চিঠি,
স্তব্ধ করে দেবো অলিগলি কাঁপানো রাইফেলের হুংকার,
স্বস্তির কোলাহলে হেসে উঠবে তোমার ক্লান্ত চোখ,
বিষণ্ন পাথরেরা ভুলে যাবে বিষাদের গান।
মিনারে মিনারে প্রতিধ্বনিত হবে আহ্বান, যে আহ্বান আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত করবে মাশরিক থেকে মাগরীব!
পবিত্র প্রাঙ্গন ভরে উঠবে ফিরে আসা পরিযায়ী কবুতরদের শান্ত আনাগোনায়,
তাদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ, ঝরা পালকের শুভ্রতা ডেকে আনবে সতেজ সুষমার নতুন ভোর।
সেই ভোরে তোমার মা, তোমার বাবা, তোমার শিশুরা চোখ মেলেই দেখবে মুক্ত রাজপথ!
নতুন যুগলের শঙ্কাহীন চোখ বুনে যাবে ভবিষ্যতের এক নতুন প্রেক্ষাপট,
মুক্ত জমিনে তাদের সন্তানদের নরম পায়ের ছোঁয়া দ্বিধাহীন চিত্তে পরিণত হবে দৃপ্ত পদক্ষেপে, যেন এক ঘুম-ভাঙ্গা সিংহের নব-অভ্যুত্থান!

প্রিয়,
কথা দিলাম। আমি কথা দিলাম।

আমি জানি, আমি খুব জানি, খুন রাঙা সরোবরের নিচে তুমি লুকিয়ে রেখেছো এক চাপা কান্নার নির্ঝরিণী!
এ কান্না একাকীত্বের, অসহায়ত্বের;
প্রশান্তির ঘুমপুরীতে একলা জাগরণের দুঃস্বপ্নে কুঁকড়ে যাওয়া অনুভবের, ছিনতাই হয়ে যাওয়া মুক্ত বাতাসে ডানা মেলা বৈভবের।

স্বজন যত আছে তোমার নামে কিংবা বেনামে; বেখবর, বেখেয়ালী,
বিশ্বাস করো, প্রিয়! আমি তাদের মতো অকৃতজ্ঞ হতে পারিনি!

আমি আসছি তোমার আকাঙ্ক্ষায় যা কিছু অস্ফুট কলতানে বায়বীয় রয়ে যায়, তার সবটুকু নিয়ে।
আমি আসছি জাগ্রত শরীরে।
বিজয়ী স্লোগানে ভাঙ্গিয়ে দেবো শতকের ঘুম,
আমার লংমার্চের ভীষণ আওয়াজে দখলদারেরা হবে নির্ঘুম!

আমি আসছি মারাকেশ থেকে, ত্রিপলি হয়ে কায়রোর পথে,
কারবালা থেকে আগুন নিয়ে, দামেস্কের বাজার হয়ে;
বসফরাসের কিনার থেকে ইস্তাম্বুলের মিনার হয়ে, ইরান-তুরান সঙ্গে করে হিন্দুস্তানের সালাম নিয়ে;
জাভা দ্বীপের সওগাত হাতে বঙ্গবাসীর উদ্দীপনে, মাযলুমানের জয়গানে কুদস মুক্তি উদযাপনে…

শুধু তোমার অশ্রু মোচনেই আমি যাবো না মেডিটেরিয়ানের পাড়ে, বরং উপহার দিয়ে আসবো ছিনিয়ে আনা বেমালুম কান্না ভুলে যাওয়া অনাবিল হাসি…

প্রিয়,
কথা দিলাম। আমি কথা দিলাম।।

– কাজী সালমা বিনতে সলিম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *